যখন দেশের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বিদ্যুৎ পরিবহন করতে হয় তখন সেটি অনেক উচ্চ ভোল্টেজে নিয়ে যাওয়া হয়। বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুতের অপচয় কমানোর জন্য এটি করা হয়। তোমরা জানো তাপ হিসেবে প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ শক্তি ক্ষয় হয় সেটি হচ্ছে কাজেই যদি বৈদ্যুতিক তারে কোনো রোধ R না থাকত তাহলে তাপ হিসেবে কোনো শক্তির অপচয় হতো না। কিন্তু সেটি বাস্তবসম্মত নয়, সব কিছুরই কিছু না কিছু রোধ থাকে। তাই কারেন্ট বা বিদ্যুৎ প্রবাহ কমাতে পারলে তাপ হিসেবে শক্তি ক্ষয় এর মান কমানো সম্ভব। প্রতি সেকেন্ডে বৈদ্যুতিক শক্তি যেহেতু VI হিসেবে যায় তাই যদি পটেনশিয়াল দশ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে দশ গুণ কম কারেন্টে সমান শক্তি প্রেরণ করা সম্ভব। দশ গুণ কম কারেন্ট প্রবাহিত হলে 100 গুণ কম তাপশক্তির অপচয় হবে। কারণ তারের রোধ R এর মান দুইবারই সমান।
এখানে তোমাদের মনে হতে পারে তাপশক্তির অপচয় হিসেবেও লেখা যায় তাই দশ গুণ বেশি ভোল্টেজ নেওয়া হলে 100 গুণ বেশি তাপশক্তির অপচয় কেন হবে না? মনে রাখতে হবে আমরা যখন প্রতি সেকেন্ডে তাপশক্তির অপচয় হিসেবে বের করেছিলাম তখন V ছিল রোধের দুই পাশের বিভব R পার্থক্য। এখানে আমরা যখন V বলছি সেটি বৈদ্যুতিক তারের দুই পাশের বিভব পার্থক্য নয়। এটি বৈদ্যুতিক তারের বিভবের মান। বৈদ্যুতিক তারের দুই পাশে বিভব প্রায় একই সমান। সেই পার্থক্য ধর্তব্যের মধ্যে নয়।
আমরা জানি দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত পাওয়ার প্লান্টগুলোতে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করে। এই বিদ্যুৎকে প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন এলাকায় পাঠাতে হয়। বিদ্যুৎ বিতরণ করার জন্য প্রথমে বিভিন্ন এলাকার সাবস্টেশনে পাঠানো হয়। সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ শক্তিকে একেবারে গ্রাহক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়।বিদ্যুৎ শক্তিকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বিতরণ করার জন্য যে পরিবাহী তার ব্যবহার করা হয় কম হলেও তাদের এক ধরনের রোধ থাকে। একটা রোধের (R) ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ ( I ) হলে সব সময়ই () তাপ উৎপন্ন হয় এবং সেটি বিদ্যুৎ শক্তির লস বা ক্ষয়। এই লসকে বলা হয় সিস্টেম লস। তোমরা এর মাঝে জেনে গেছ যে একটা নির্দিষ্ট বিদ্যুৎ শক্তির জন্য যদি উচ্চ ভোল্টেজ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় তাহলে রোধজনিত তাপশক্তি হিসেবে লস কমে যায়। সে জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা হয় সেটিকে স্টেপ আপ ট্রান্সফর্মার দিয়ে উচ্চ ভোল্টেজে রূপান্তর করা হয়। গ্রাহকদের ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ শক্তিকে বিতরণ করার আগে স্টেপ ডাউন ট্রান্সফর্মার ব্যবহার করে সেটিকে আবার ব্যবহারযোগ্য ভোল্টেজ নামিয়ে আনা হয়।
প্রত্যেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করে এবং সবগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়। আগেই বলা হয়েছে এই বিদ্যুৎ স্থানীয় সাবস্টেশন (বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র) এর মাধ্যমে গ্রাহকদের মাঝে বিতরণ করা হয়। বিভিন্ন এলাকার চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় গ্রিড বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। কোনো এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা যদি উৎপাদন থেকে বেশি হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে না। তখন সাবস্টেশনগুলো এক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য অন্য একটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। এই প্রক্রিয়াটার নাম লোডশেডিং। সাবস্টেশন যখন আবার প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ পায় তখন সেই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে।
যদি একনাগাড়ে কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হয় তখন গ্রাহক পর্যায়ে লোডশেডিংকে সহনীয় করার জন্য কর্তৃপক্ষ চক্রাকারে বিভিন্ন জায়গা আলাদা আলাদা সময়ে লোডশেডিং করে থাকে।